আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার আদিতমারীতে ভিজিডি’র ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ইউএনওকে অকথ্যভাষায় গালমন্দ ও লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার লাঞ্চিতের বিচার চেয়ে উপজেলার কর্মরত সকল অফিসারকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।
এদিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস তার বাসভবণে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইউএনওসহ অধিকাংশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও তিনি কোন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেননি। তিনি এ সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, দুঃস্থ্য মহিলাদের সহায়তার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ভিজিডি প্রকল্প চালু করেছে সরকার। সাম্প্রতিক সময় সেই প্রকল্পের উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুতে কাজ শুরু হয়। নিয়মানুযায়ী অনলাইনে আবেদনগুলোর বাচাই করে ইউনিয়ন পরিষদ চুড়ান্ত করে উপজেলা কমিটিকে জমা দিবেন। উপজেলা কমিটি তা চুড়ান্ত অনুমোদন দিবেন। সেই ভিজিডিতে ভাগ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।
বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ হলরুমে মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয় । এ সময় ভিজিডি কার্ডে ভাগ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এ সময় বিধি মোতাবেক ভাগ দেয়ার সুযোগ নেই বলে জানান ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। এতে সভায় বিতর্ক বাঁধলে সভাস্থল ত্যাগ করে নিজের অফিসে চলে যান উপজেলা চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান লোক দিয়ে উপজেলা পরিষদের সিসিটিভি’র ক্যামেরায় খোলার কাজ করছিলেন। সেই কাজ কার নির্দেশনায় হচ্ছে এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান নিজের নির্দেশনায় করছেন বলে ইউএনওকে জানান।
এ সময় ইউএনও এ দৃশ্যটি নিজের মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। কেন ছবি তুললেন এ নিয়ে ইউএনওকে বাবা তুলে গালমন্দ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এতে দ্বিতীয় দফায় উভয়ের মাঝে বেশ উত্তেজনার সৃষ্ঠি হয়। অফিসাররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করলে তাদেরও অকথ্য ভাষায় চেয়ারম্যান গালমন্দ ও মারপিটের হুমকী দেন বলে অফিসাররা অভিযোগ করেন।
খবর পেয়ে আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ফোর্স নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে উপজেলা পরিষদে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন। এ সময় ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন উপজেলার সকল অফিসারকে নিয়ে তাৎক্ষনিক উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করে জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে বিচার দাবি করেন। জেলা প্রশাসক আবু জাফর অফিসারদের অভিযোগ শুনে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক অফিসার জানান, শুরু থেকে ইউএনও এবং চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। চেয়ারম্যান প্রায় সময় অফিসারদেরকে দ্বিতল ভবন থেকে ফেলে দেয়ার হুমকীসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। মাসিক সভায় ভিজিডি’র ভাগ চেয়ে না পেয়ে ইউএনওকে গালমন্দ করে সভা থেকে বেড়িয়ে যান চেয়ারম্যান। পরে বারান্দায় আবারো গালমন্দ করেন চেয়ারম্যান। ইউএনওকে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন “এটা তোর বাবার উপজেলা? তোকে মেরে লাশ নরসিংদীর লোক নরসিংদীতে পাঠায়ে দিবো” বলে হুমকী দেন।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তার অনিয়মের বিরোধিতা করায় প্রায় সময় অফিসারদের সাথে অসৌজন্য আচরন করেন চেয়ারম্যান। যা নিয়ে অফিসাররাও ক্ষিপ্ত।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, কোন ধরনের মিটিং ছাড়াই ইউএনও একক সিদ্ধান্তে কাজ করছেন। আশ্রয় প্রকল্প ২ এবং এডিপি’র কাজ নিজেই করছেন ইউএনও। তার নানান অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আমার উপর অফিসারদের ক্ষেপিয়ে অফিস ছেড়ে ডিসি অফিসে গেছেন ইউএনও। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করুক। তদন্ত করলে সত্যতা বেড়িয়ে আসবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, ইউএনওসহ অফিসারদের কথা শুনে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।